কাজী বজলুল হক, পিতা- মৃত কাজী আলীমুদ্দিন, মাতা- মৃত ছাম্মিয়া খাতুন। স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম-পালীশারা, ডাকঘর- পালীশারা, উপজেলা- হাজিগঞ্জ, জেলা- চাঁদপুর। তিনি ১৯৩৮ সনের ৩০ অক্টোবর তারিখে পালীশারা গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাগত অর্জন: পালীশারা প্রাইমারী স্কুলে হাতে খড়ি – সেই স্কুল থেকে ১৯৪৮ইং সনে তিনি জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। সপ্তম শ্রেণি থেকে শাহরাস্তি হাই মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে ১৯৫৩ সনে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৫ সনে লাকসাম পশ্চিমগাঁও ফয়েজুন্নেছা কলেজ থেকে আই,এ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং মেধা তালিকায় ৩য় স্থান দখল করেন। ১৯৫৭ সনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চতর ২য় বিভাগে বি, এ পাস করেন। উল্লেখ্য যে, তখনকার দিনে পাস কোর্সে কেহ প্রথম বিভাগ পেতনা। ১৯৬২ সনে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে পাস করেন ও মেধা তালিকায় ৫ম স্থান অধিকার করেন।
পেশাগত জীবনঃ ১৯৫৭ সনেই পালীশারা হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে রাঙ্গুনিয়া হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সন থেকে ১৯৭২ সন পর্যন্ত লাকসাম পাইলট হাই স্কুল, হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর এর সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঐ সময়ে প্রায় প্রত্যেক বছরই লাকশাম পাইলট হাই স্কুলের ছাত্ররা বোর্ড পরীক্ষায় বিভিন্ন বিভাগে মেধা তালিকায় স্থান পেত। মেধাবী ছাত্রদের অনেকেই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। ২০০৩ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে কর্মরত ছিলেন।
পুরষ্কার ও স্বীকৃতিঃ ১৯৭৩ সনে ১লা জানুয়ারি থেকে বর্তমান প্রতিষ্ঠান হাজিগঞ্জ পাইলট হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ স্কুলে তার শিক্ষকতার সময়ে প্রায় প্রত্যেক বছরই এ স্কুলের ছাত্র- ছাত্রীরা বোর্ডের পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেতো- তদুপরি জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায়ও ট্যালেন্টপুল এবং সাধারণ গ্রেডে উপজেলা কোটার অধিকাংশই এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা দখল করে থাকতো। শিক্ষকতা জীবনে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পর্যায়ে দু’বার স্বর্ণপদক ভূষিত ও সনদপত্র প্রাপ্ত হয়েছে। শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত ও সনদ প্রাপ্ত হয়েছি। শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ সনে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি এঁর নিকট হতে স্বর্ণপদক ও সনদ গ্রহণ করেন।
পারিবারিক বৃত্তান্তঃ তাঁরা তিন ভাই ও দু’বোন। বড় বোন মিসেস আমেনা বেগম, বড় ভাই কাজী ছিদ্দিকুর রহমান, ছোট ভাই কাজী সিরাজুরল হক, ছোট বোন- আনোয়ারা বেগম। ১৯৫৫ সালে তিনি বেগম তফুরুননেছা এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর চার পুত্র ও এক কন্যা। ১ম পুত্র কাজী আনোয়ারুল হক। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ২য় পুত্র ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার। তিনি সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক। ৩য় পুত্র কাজী মাহবুবুল আলম বর্তমানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। ৪র্থ পুত্র কাজী মাজহারুল হক সোহাগ কাকৈরতলা সিনিয়র মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালের ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে তানজিনা ফেরদৌস। তিনি বর্তমানে উপাধ্যক্ষ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ঢাকা। উল্লেখ যে, তাঁর আদর্শ গৃহিনী বেগম তফুরুননেছার নামে পালিশারা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তফুরুননেছা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।
মৃত্যুবরণঃ তিনি হাজিগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালের ২৩ মে সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৩ সালের ২৬ মে মৃত্যুবরণ করেন।